জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় চলতি ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। এতে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী ভুট্টা চাষ উপযোগী হওয়ায় জয়পুরহাট সদর উপজেলা, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলায় ভুট্টার চাষ বেশি হয়ে থাকে। কৃষকদের ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বিএডিসির পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ভুট্টা বীজ সরবরাহ করা হয়েছে । ভুট্টা চাষে তুলনামূলক লেবার ও পরিচর্যা খরচ কম হওয়ার কারণ লাভ হয় বেশী।

সদরের দাদরা ধুলাতর গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী বলেন,ফলন ভালো ও ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

ভুট্টা স্বল্প পানির চাহিদা সম্পন্ন ফসল হিসেবে জনপ্রিয়। ভুট্টা আবাদে বীজ বপনের ২৫-৩০দিন পর ১ম বার সেচ প্রয়োগ ও আগাছা দমন, ৫০-৫৫ দিন পর ২য় বার, ৭০-৭৫দিন পরে ৩য় বার হালকা সেচ প্রয়োগ করলে বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। রোগ বালাই, পোকা মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয় ভুট্টাতে। ফলে জেলায় দিন দিন ভুূট্টার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৮৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ভুট্টার চাষ হয়েছে ৮৫৫ হেক্টর জমিতে । যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর অতিরিক্ত।

ভুট্টা ফসলের মোচা বা কব সংগ্রহের পরে গাছের অবশিষ্ট অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়, ভুূট্টার আটা, ময়দা, গো খাদ্য তৈরিতে দেশে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। মুরগি ও গো-খাদ্য তৈরির জন্য জয়পুরহাটের ফিডমিল গুলোকে জেলার বাইরে থেকে ভুট্টা আমদানী করতে হয়।

আমদানি রোধে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধিতে জয়পুরহাট জেলায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কায়ছার ইকবাল। কৃষকদের মাঝে উন্নত জাত সরবরাহ, উদ্ধুদ্ধকরণ ও পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জেলায় সুপারসাইন-২৭৬০ জাতের ভুট্টার নতুন জাত প্রবর্তনে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন। এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করার জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূিচর আওতায় প্রতিজন ভুট্টা চাষিকে ২ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার ও ২০ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে।

জেলায় এবার এক হাজার চািষকে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মোট ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকার সার, বীজ ও পরিবহন খরচ দেওয়া হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে প্রযুক্তিগত কলাকৌশল ও পরামর্শ পেয়ে চাষাবাদ করতে পেরে অত্যন্ত খুশি বলে জানান ভুূট্টা চাষিরা ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, জেলায় এবার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে জেলায় এবার প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।